শিশুদের নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

 আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক বন্ধুরা,আপনারা কি শিশুদের নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ এবং প্রতিকার বিষয় নিয়ে চিন্তিত এবং সেগুলো কি খুঁজছেন?অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও কি সেগুলো পাচ্ছেন না। চলুন আজকে আমরা এই পোস্টটির মাধ্যমে জানবো শিশুদের নিমোনিয়া রোগের লক্ষণ ও এর প্রতিকার সম্পর্কেও জানবো। এই সকল বিষয়ে জানতে হলে আমাদের পোস্টটি পড়ে আমাদেরকে সহযোগিতা করুন



এই পোষ্টের মধ্যে আমরা আরো আলোচনা করেছি  নিউমোনিয়ার  রোগের লক্ষণ কি এবং এর প্রতিকার কি?এছাড়াও আরো আলোচনা করেছে বাচ্চাদের নিউমোনিয়া হলে কিভাবে বুঝব এর এন্টিবায়োটিক   কি আরো কি ওষুধ খাওয়াবো সেগুলো নিয়েও সঠিক সম্পর্কে জানতে পারব।এই সকল তথ্য জানতে হলে আমাদের পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়তে হবে।




নিউমোনিয়া কি?

নিউমোনিয়া হলো এক ধরনের রোগ, যা ফুসফুসে প্রদাহ সৃষ্টি করে ।আমাদের সকলেরই ফুসফুস আছে ।নিউমোনিয়া সাধারণত আমাদের ফুসফুসের অ্যালভিওলাস বা ছোট ছোট বায়ুথলিতেসংক্রমনের। 

ফলে এক ধরনের প্রদা সৃষ্টি করে প্রতিবছর প্রায় হাজার হাজার মানুষ এই নিমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়।এই রোগের প্রায় ২৩ ভারতবর্ষ থেকে আসে প্রতিবছর।

আমাদের ছয়টি ঋতুর মধ্যে শীতকালে এই রোগটি বয়স্ক এবং শিশুদের আক্রমণ বেশি করে।এই আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুর হার প্রায় ১৪ থেকে ৩০% পর্যন্ত।এর জন্য আমাদের এই রোগের কারণ লক্ষণ এবং প্রতিকার সম্পর্কে বিশেষভাবে জানতে হবে।

নিউমোনিয়া লক্ষণ গুলো কি কি

মানুষ অনেক সময় বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। সেই রোগগুলো শনাক্তকর করা হয় তার লক্ষণের মাধ্যমে ।আমরা যদি সেই লক্ষণগুলো ঠিকমতো জানতে পারি তাহলে আমরা অল্পতেই সঠিক চিকিৎসা করতে পারব।

ঠিক তেমনি নিউমোনিয়ারও কিছু লক্ষণ রয়েছে আমরা সেগুলো জানব।এই লক্ষণগুলি ধীরে ধীরে আমাদের শরীরের দেখা দিতে থাকে।আমরা যেসব লক্ষণগুলো দেখলে বুঝবো নিউমোনিয়া হয়েছে সেগুলো হলো;

  •  প্রথমত কাশি হতে থাকে এবং কাশির সাথে সবুজ বা হলুদ বর্ণের কফ ।
  • ২.প্রচুর শ্বাসকষ্ট হতে থাকে
  • ৩.কখনো কখনো শ্বাস নেওয়ার সময় অথবা কাশির সময় বুকে ব্যথা অনুভব হতে পারে।
  • ৪.যখন শ্বাস নেওয়া হয় তখন ভিতরে ঘড়ঘর আওয়াজ হয়
  • ৫.অনেক ক্ষেত্রে শরীরে উচ্চ তাপমাত্রা জ্বর আসতে পারে (১০৩ থেকে ৪ ফারেনহাইট ডিগ্রী অফ বা প্রায় ৪০ ডিগ্রির কাছাকাছি তাপমাত্রা হতে পারে)
  • ৬.অনেক সময় বুকে ব্যথা অনুভব হয়।
  • দীর্ঘদিন ধরে কাশি হতে থাকে প্রায় ৩/৪ সপ্তাহর মতো।
  • ৭.সমস্ত শরীরে ব্যথা অনুভব হয়।
  • ৮.অনেক সময় অতিরিক্ত কাশি হওয়ার কারণে কাশির সাথে রক্তপাত হয়।
  • ৯.এই সময় খাবারের প্রতি একটুকু রুচি থাকে না।
  • ১০.শরীরে অনেক ক্লান্তি অনুভব হয়।
সাধারণত এগুলোই নিউমোনিয়া লক্ষণ এর মধ্যে যদি সামান্য কিছু কোন লক্ষণ ও আপনারা দেখতে পান তাহলে সাথে সাথে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিউমোনিয়াচিকিৎসা গ্রহণ করতে পারেন।

এই লক্ষণ গুলোর মধ্যে স্বাভাবিকভাবে বেশি দেখা যায় কাশি জ্বর এবং শরীরে ক্লান্ত অনুভব হয়।৯০% সময়ে এই লক্ষণ গুলো আগে দেখা দেয়।

তাহলে উপরোক্ত লক্ষণগুলো দেখার বা কোন লক্ষণ যদি প্রকাশ পায় তাহলে বুঝতে হবে যে আপনাদের নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়েছেন আর সাথে সাথে আপনারা ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করে দেবেন।

বাচ্চাদের নিউমোনিয়া হলেকিভাবে বুঝতে পারব?

নিউমোনিয়াএমন একটি রোগ যেটি অনেক সময় একজনের প্রাণঘাতি রোগ হয়ে উঠতে পারে আর শিশুদের জন্য এটি অনেক সময় একটি মারাত্মক এবং প্রাণঘাতী রোগ হয়ে ওঠে।

অনেক সময়খুনগুলো না জানার কারণে অনেক মানুষ আছে যারা সঠিক চিকিৎসা গুলো করতে পারে না এর জন্য ও অনেক শিশু মারা যায়

নিউমোনিয়ার জন্য সমগ্র পৃথিবীতে প্রায় পাঁচ মাস বয়সী শিশুর মধ্যে প্রায় শতকরা 16 ভাগই এই রোগে আক্রান্ত মৃত্যুবরণ করে। আমাদের দেশে প্রতিবছর ২৫ হাজারের কাছাকাছি শিশু মারা যায় এই নিউমোনিয়ার কারণে।

যে সকল শিশুদের নিমোনিয়া হওয়ার সম্ভাবনার বেশি:
  • ১.যে সকল শিশুরা চরম অপুষ্টিকর তাদের এই নিউমোনিয়া হওয়ার সম্ভাবনা বেশি
  • ২.শিশুদের মধ্যে অনেকেই সংক্রমণ রোগে আক্রান্ত যারা যেমন:হাম , কাশি।
  • ৩. যে সকল শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হয়।
  • ৪.অনেক শিশুই আছে যারা জন্মগতভাবে ফুসফুসে আক্রান্ত হয়ে থাকে
  • ৫.এর কালো ধোয়া বায়ু দূষণ করে এবং অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে

আমরা যদি নিউমোনিয়া লক্ষণগুলো জানতে পারি এবং সেগুলো যদি সনাক্ত করতে পারি তাহলে খুব সহজেই বুঝতে পারবো যে শিশুদের নিউমোনিয়া হয়েছে কিনা।আমার যদি এই মৃত্যুর হার কমাতে চায় তাহলে আমাদের সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে এটি সম্ভব হবে।এগুলো হলো:



নিউমোনিয়া হলে প্রতিরোধ ও প্রতিকার

আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি যে বাংলাদেশের প্রায় প্রতিবছর পঁচিশ হাজার শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্তে মারা যায়।পৃথিবীতে প্রায়১৬ ভাগ শিশুর মৃত্যু হয় এই নিমোনিয়ার কারণেঅর্থাৎ প্রায় পৃথিবীতে ৩৫ সেকেন্ডের মধ্যে একটি করে শিশু মৃত্যুবরণ করে শুধুমাত্র এই নিউমোনিয়ার কারণে।
১.অনেক ক্ষেত্রে ছোট শিশুদের না খেয়ে জীবনু থেকে যায় জীবাণুগুলো ফুসফুসে নেমে প্রদাহ তৈরি করতে পারে। 
২.যে সকল ব্যক্তি এই রোগে আক্রান্ত তার থেকে নির্গত হাঁচি কাশির থেকে বের হওয়া কফ।
৩.অনেক ক্ষেত্রে জনের পরপরই রক্তের মাধ্যমে এটি ছড়াতে পারে।
এই নিমোনিয়া রোগ থেকে বাঁচার সবচাইতে উত্তম উপায় হল শিশুদের নিমোনিয়ার টিকা প্রদান করা।আমাদের দেশে জাতীয় টিকাদান কর্মসূচির আওতায় এই টিকা প্রদান করা হয় বিনামূল্যে।এছাড়াও নিউমোভ্যাক্স ২৩ নামক এক ধরনের ভ্যাকসিন বাজারে পাওয়া যায়।
এর পাশাপাশি যে সকল শিশুদের এলার্জি রয়েছে তাদের প্রতিবছর এক ধরনের এ
ভ্যাকসিন দেওয়া হয় এটি হলো ফ্লু ভ্যাকসিন।নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করার সবচাইতে ভালো মাধ্যম।
এছাড়াও যে সকল শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে কম তাদের পুষ্টিকর খাবার এর মাধ্যমে তাদের উপযোজন ক্ষমতা বাড়ানো হয় এবং বুকের দুধ পান করানো হয় সাথে আরো প্রচুর শক্তি সমৃদ্ধ করে এমন খাবার খাওয়ানো উচিত

সকল অভিভাবকদের উচিত তাদের সব শিশুদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা শেখানো এবং তা নিজেও পালন করা।শিশুদের ছোটবেলা থেকেই শেখানো উচিত
হাঁচি এলে কোন কিছুর মাধ্যমে ঢেকে হাচি  দিতে  হবে যেমন টিস্যু বা হাতের জামার আড়ালে দিতে হবে এবং সেটি সাথে সাথে ফেলে দিতে হবে টিস্যুটি।সবসময় হাত পরিষ্কার রাখতে হবে ।
বড়দের উচিত ছোট বাচ্চাদের কোলে নেওয়ার আগে বা তাদের স্পর্শ করার আগে সম্পূর্ণরূপে ভালোভাবে হাতটি ধুয়ে নেওয়া।
ছোট বাচ্চারা যে সকল জিনিসগুলো বেশি স্পর্শ করে যেমন খেলনা পড়ার টেবিল এগুলোকে বেশি বেশি পরিষ্কার রাখতে হবে প্রয়োজনীয় সেনটাইজার দিয়ে সেগুলোকে ভালো করে জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে।
সেই সাথে বাসায় খেয়াল রাখতে হবে যেন বেশি ধোয়া নির্গত চুলায় রান্না না করা হয় এবং বাসায় যেন কেউ ধূমপান না করে অনেক সময় ধোয়ার ক্ষেত্রে শিশুদের ফুসফুসে  নিউমোনিয়ার প্রদাহ সৃষ্টি হয়ে থাকে।
প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ গড়ায় উত্তম নিউমোনিয়া একটি মারাত্মক ক্ষতিকারক রোগ কিন্তু এটি প্রতিরোধের মাধ্যমেই বেচে যাওয়া যায়।উচিত সতর্কতার সাথে এটি প্রতিরোধ করা।

নিউমোনিয়া চিকিৎসা কি?

নিমুরিয়া একটি সংক্রামক রোগ।এটির তীব্রতা এবং ধরন অনুযায়ী বিভিন্ন সময় বিভিন্ন চিকিৎসা দেয়া থাকে। অনেক ক্ষেত্রে এটির জন্য ওষুধও সেবন করা হয়ে থাকে,তার মধ্যে কতগুলি হলো,

অ্যান্টোবায়োটিক:

নিউমোনিয়া রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়ার বিভিন্ন ক্যাটাগরি হিসেবে ডাক্তারগণ বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক গুলো নির্ধারণ করে থাকে।অনেক ক্ষেত্রে এই রোগগুলো  সঠিক উপসর্গ লাঘব না হলে,সেগুলো পরিবর্তন করে আবার নতুনভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়।

কাশির ওষুধ:

এখন রোগীর অতিরিক্ত কাশি রয়েছে সেটিতার জন্য খুবই কষ্টকর হয়ে ওঠে।সেই ক্ষেত্রে কাশির সিরাপ বা ওষুধ রোগীকে  কাশি থেকে বিশ্রাম নিতে সাহায্য করে। রোগীর ফুসফুস থেকে তরল নির্গতের জন্য কাশির প্রয়োজন হয়।একত্রে রোগীকে অল্পমাত্রায় কাশির সিরাপ দেওয়া যেতে পারে।

এন্টি পাইরিটিকস:

অনেক সময় রোগীর শরীরে মাত্রাধিক বেশি জ্বর এবং শরীরে অনেক ব্যথা অনুভব হতে পারে সেই ক্ষেত্রে ব্যথা জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ সেবনের মাধ্যমে সেটি থেকে মুক্তি লাভ করতে পারে


অনেক ক্ষেত্রে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন হতে পারে যদি তার জ্বর স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয় এবং শিশু যদি দুই মাসের ছোট হয় বা শরীরে সমস্ত শক্তি সে হারিয়ে ফেলে তাহলে সাথে সাথে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে তার চিকিৎসা শুরু করতে হবে অনেক ক্ষেত্রে আছে ছোট শিশুদের জলশূন্যতা দেখা দেয় তাহলে দেরি না করে দ্রুত তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে

যারা এই নিমোনিয়া রোগে আক্রান্ত তাদের প্রচুর বিশ্রাম করতে হবে।তাদের প্রচুর পরিমাণে তরল জাতীয় খাবার সেবন করতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নির্ধারিত ওষুধগুলো সেবন করতে হবে এর ফলে তারা তার জীবনের ঝুঁকি কমে যাবে।
এই সকল পরামর্শ যদি সে মেনে চলে তাহলে সে দ্রুত সুস্থ হতে পারবে

মূলকথা হলো:      

 আমরা যদি ওপরের  সকল বিষয়গুলো মেনে চলি তাহলে আমরা এই রোগটির প্রতিরোধ  করতে পারবো এবং এর সাথে  প্রতিকারও তৈরি করতে পারব এবং এই রোগের সকল চিকিৎসা করা সম্ভব  যদি আমরা এই রোগের লক্ষণগুলো জানা থাকে।

 ধন্যবাদ সকল পাঠকবৃন্দদের আমার এই পোস্টটি পড়ার জন্য। 




এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১