যক্ষা রোগের লক্ষণ ও তার প্রতিকার
প্রিয় বন্ধুরা আসসালামু আলাইকুম।আশা করি সবাই ভাল আছে।তোমরা কি যক্ষা রোগের লক্ষণ ও তার প্রতিকার বিষয় সম্পর্কে জানতে চাও? বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজির পরও সঠিক উত্তর পাচ্ছো না।আজকে আমরা এই পোস্টটির মাধ্যমে জানতে পারবো যক্ষা রোগের লক্ষণ ও তার প্রতিকার এবং যক্ষা রোগের কারণ সম্পর্কে।এই সকল তথ্য জানার জন্য সম্পূর্ণ রূপে মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে।
এই পোষ্টের মধ্যে আমরা আরো জানতে পারবো যক্ষা রোগের কারণ কি? এই রোগ কি কারণে হয়।।আরো জানতে পারবো এই রোগ কিভাবে ছড়ায়। এর কি কোন চিকিৎসা আছে এর লক্ষণ সম্পর্কেও আমরা জানতে পারবো। চলুন আমরা পোস্টটি সম্পূর্ণ সকল বিষয়ের অবগত হয়।
যক্ষা কি?
যক্ষা হল এক ধরনের জীবাণুবাহিত রোগ।এই রোগের জীবাণুর নাম হলো মাইকো ব্যাকটেরিয়াম।যক্ষার অপর নাম হলো টিবি। এই রোগ মূলত সরাসরি ফুসফুসে আক্রমণ করে।
এই রোগ বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয় মারাত্মক রোগ হিসেবে চিহ্নিত। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন এর সাম্প্রতিক রিপোর্ট এর মতে ভারতে এই রোগ আক্রমণ অনেক বেশি।এই রোগের মূল টার্গেট হলো মানব দেহের ফুসফুস।
ফুসফুস ছাড়াও এই রোগটি হাড়েও হয়।এই রোগ বিশেষভাবে মেরুদন্ডের হাড়ে ও লম্বা হাড়ের প্রান্তে হয়ে থাকে।যক্ষার আক্রমণের অন্যান্য অঙ্গ গুলো হলো কিডনি, মস্তিষ্ক ও অন্যান্য হাড়ের প্রান্তে।
যক্ষা রোগের কারণ
আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে অনেক বেশি সংক্রমণ যা অধিক পরিমাণে সংক্রমক।এই রোগ ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে সৃষ্টিকারী সংক্রামক রোগ। যার মুল টার্গেট হলো মানব দেহে ফুসফুস।
এই রোগে আক্রান্তকারী ব্যক্তি যখন হাসি কাশি দেয়, যার কারনে এই ব্যাকটেরিয়া বায়ুতে সহজে মিশে যায়। আর এটি একটি ছোঁয়াচে রোগ হওয়ার কারণে অন্যান্য ব্যক্তিও সংস্পর্শে চলে আসে।
তথ্য অনুযায়ী একজন আক্রান্ত ব্যক্তি প্রায় ১০ জনকে এটির সংস্পর্শে আনতে পারে।এর মূল কারণ হলো এটি বায়ুর মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এখন তো অনেক মানুষকেই পাওয়া যাবে যারা এই রোগে আক্রান্ত।
কিন্তু অনেক আছে যাদের দেহে এটি সুপ্ত অবস্থায় থাকে কারণ তাদের দিয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি।
যক্ষা রোগের লক্ষণ কি কি
আমরা এখন যক্ষা রোগের লক্ষণ গুলো কি কি হতে পারে সেগুলো জানবো।আর সেগুলো হলো:
- এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের রাতে ঘুমানোর সময় অনেক ঘাম হয়।
- অনেক সময় ক্ষুধামন্দা দেখা দিতে পারে।
- অনেক সময় মাঝেমাঝে হঠাৎ করে বুকে ব্যথা অনুভব হয়।
- যক্ষা বা টিবির মূল লক্ষণ হলো কাশি।
- অনেকেরই কাশির সঙ্গে রক্তপাত হতে পার। কারো কারো হালকা হয় আবার অনেক সময় ঘন।
- আক্রান্ত ব্যক্তির মূত্র সঙ্গে অনেক সময় রক্ত বের হয়।
- অনেকের আবার ওজন কমে যায়।
- পেটে তীব্র ব্যথা অনুভব হতে থাকে।
- প্রসব পায়খানার অভ্যাস পরিবর্তন হয়ে যায়।
- অনেকের দেহে দুর্বল হওয়ার কারণে কিচুনি দিয়ে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে।
- অনেকের রাত্রে বা সন্ধ্যার সময় কাঁপুনি দিয়ে জ্বর হয।
- পেটে বা বুকে পানির জমাট বেধে যায।
এগুলোই হল যক্ষা রোগের লক্ষণ।কারো যদি এগুলোর মধ্যে একটি লক্ষণও প্রকাশ পায় তাহলে সাথে সাথে পার্শ্ববর্তী ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা উচিত।
যক্ষা কত প্রকার
যক্ষা কয়েক প্রকার প্রকার হতে পারে। প্রধানত এটি দুই প্রকার হয়।একটি নাম হল সক্রিয় এবং অপরটির নাম হল সুপ্ত।আমরা সক্রিয় মানে বুঝে থাকি যে কোন কিছু সচল থাকা।
আর ঠিক একইভাবে সক্রিয় যক্ষা মানে হলো এর লক্ষণগুলো বহিঃপ্রকাশ পায়। আর সুপ্তর ক্ষেত্রে প্রকাশ পায় না এটি দেহের মধ্যেই সুপ্ত অবস্থায় থাকে। অর্থাৎ এর কোন লক্ষণ প্রকাশ পায় না।
যক্ষার কি কিভাবে ছড়ায়
যক্ষা মূলত এক ধরনের ছোয়াচে রোগ। এটিকে বায়ুবাহিত রোগও বলা হয়। যক্ষা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলেই এই রোগটি ছড়িয়ে থাকে। আর এই রোগ সরাসরি দেহের ফুসফুসে আশ্রয় নেয়।
এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলেই মাত্র এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং এই রোগ মূলত সংক্রমণ ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার কারণেই হয।
যক্ষা রোগের চিকিৎসা কি
আগের মানুষের মধ্যে একটি প্রচলিত বাক্য আছে সেটি হলো ''যক্ষা হলে রক্ষা নাই''। কিন্তু বর্তমানে এ কথার কোন ভিত্তি নাই। কিন্তু এখন চিকিৎসার মাধ্যমে যক্ষা সম্পূর্ণভাবে ভালো করা যায়।
চিকিৎসকগণ এই যক্ষা রোগের চিকিৎসা মূলত দুই ধরনের দিয়ে থাকে।একটি হলো নিয়মিত প্রায় ছয় মাস ওষুধ সেবনের মাধ্যমে।দ্বিতীয় টি হলো প্রায় নয় মাস ধরে ওষুধ সেবন করতে হয়।
আমরা অনেকেই আছি নিজেকে ডাক্তার মনে করি ওষুধ সেবন করার ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তি তিন মাস ওষুধ সেবন করার ফলে সুস্থ অনুভব করে এবং সে ওষুধ সেবন করা বন্ধ করে দেয়। কিন্তু এটি মোটেও ঠিক নয় ।
কারণ যক্ষা রোগে আক্রান্ত হলে আর যদি কেউ এটির ওষুধ সেবন করে তাকে সম্পূর্ণ ডোজ কমপ্লিট করতে হবে। কেউ যদি এই ওষুধের ডোজ সম্পূর্ণ কমপ্লিট না করে তাহলে তার আবার যক্ষা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং পরবর্তীতে এই ওষুধের মাধ্যমে যক্ষা ভালো নাও হতে পারে।
যার ফলে মানুষ এক্সট্রিম ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিবি ও মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিবিতে আক্রান্ত হতে পারে। এগুলোর চিকিৎসার জন্য প্রচুর টাকা ব্যয় হয় যা সাধারণ মানুষের সাধ্যের মধ্যে নয়।
যক্ষা রোগের প্রতিরোধ ও প্রতিকার?
আমাদের এশিয়ার মধ্যে যক্ষা রোগটি বহু প্রচলিত রোগ।এই রোগটি মূলত এক ধরনের ছোঁয়াচে রোগ। যার ফলে এই রোগের ব্যাকটেরিয়া কাশি হাচির মাধ্যমে বাতাসের সঙ্গে মিশে সহজেই অন্য ব্যক্তি আক্রান্ত হতে পারে,
আমরা যদি কিছু বিষয়ে খেয়াল করি তাহলে প্রতিরোধ করা সম্ভব।যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখবো সেগুলো হলো
- যে সকল ব্যক্তি এই রোগে আক্রান্ত তাদের সংস্পর্শে না আসার চেষ্টা করব।
- আমাদের দেহে যেন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এজন্য পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার সেবন করব।
- শিশু জন্মগ্রহণের পরে প্রত্যেকটি শিশুকে বিজিবি টিকা দিতে হবে।
- প্রত্যেকদিন শরীরচর্চার অভ্যাস তৈরি করুন।
- যেখানে বসবাস করবেন সেখানে যেন আলো বাতাস ঘরে প্রবেশ করতে পারে এবং পরিবেশ যেন খোলামেলা হয়।
- ডায়াবেটিকস রোগ মূলত আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। কোন ব্যক্তি যদি এই রোগে আক্রান্ত থাকে তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হবে
- পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ঈমানের অঙ্গ তাই আমাদের সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।
- যে সকল ব্যক্তির রক্ষায় আক্রান্ত তাদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখার চলা উচিত। তাদের সবার থেকে আলাদা করে অন্য এক জায়গায় রাখতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে ব্যক্তি যেন যেখানে সেখানে কফ থুতু না ফেলতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
- সর্বশেষ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধের কোর্স শেষ করতে হবে
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url